কক্সবাজার জার্নাল ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা রাশিয়ার ৬৯টি জাহাজকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া হবে না। এসব জাহাজকে মোংলা বন্দরে ভিড়তে নিষেধ করে বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। ফলে নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা রাশিয়ার কোনও জাহাজ গ্রহণ করছে না বাংলাদেশ।
সোমবার (২৩ জানুয়ারি) বিষয়টি বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন শাহীন মজিদ। এর আগে গত ৫ জানুয়ারি উপসচিব এস এম মোস্তফা কামাল স্বাক্ষরিত চিঠিতে নিষেধাজ্ঞার তথ্য বন্দর কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।
নাম পরিবর্তন করে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় থাকা রুশ জাহাজ স্পার্টা-৩-এ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সরঞ্জাম পাঠিয়েছিল রাশিয়া। ‘উরসা মেজর’ নামের রাশিয়ার পতাকাবাহী জাহাজটি গত ২৪ ডিসেম্বর মোংলা বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। তার আগেই ২০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে জানানো হয়, জাহাজটি আসলে ‘উরসা মেজর’ নয়—এটি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা ‘স্পার্টা-৩’ জাহাজ। এ নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।
বিষয়টি যাচাই করে বাংলাদেশ নিশ্চিত হয়ে জাহাজটিকে বন্দরে ভিড়তে নিষেধ করে দেয়। পরে জাহাজটি পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া বন্দরে গিয়ে সরঞ্জাম খালাসের চেষ্টা করে। কিন্তু সরঞ্জাম খালাসের জন্য জাহাজটি নয়াদিল্লির অনুমতি পেতে ব্যর্থ হয়। এ অবস্থায় ১৬ জানুয়ারি ভারতের জলসীমা ছেড়ে যায় জাহাজটি।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষকে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা সাতটি কোম্পানির ৬৯ জাহাজকে বন্দরে প্রবেশ, নিবন্ধন, জাহাজ বাঙ্কারিং (তেল সরবরাহ), শ্রেণিকরণ, সনদায়ন, রক্ষণাবেক্ষণ, পুনঃসরবরাহ, রিফুয়েলিং, বীমা এবং অন্যান্য সামুদ্রিক পরিসেবা নিষেধাজ্ঞার আওতায় এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ পতাকা রেজিস্ট্রেশনকারী সংস্থা কর্তৃক জাহাজসমূহের জন্য স্থায়ী ও অস্থায়ী যেকোনো ধরনের রেজিস্ট্রেশন প্রদান না করার জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে মোংলা বন্দরকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’
হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন শাহীন মজিদ বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে আসা চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা সাতটি কোম্পানির ৬৯ জাহাজের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এরই মধ্যে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে ৬৯টি জাহাজের তালিকা বন্দর সংশ্লিষ্ট এজেন্ট ও ব্যবসায়ীদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। এসব জাহাজ যাতে মোংলা বন্দরে প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা রাশিয়ার উল্লেখযোগ্য জাহাজগুলো হলো—এম ভি স্পার্টা-১, স্পার্টা-২, বেলোমোরস্কাই, সিজহোবকা, ডিভিনস্কাই জালিভ, ইনযিনার টারবিন, ইনযিনার ভেসনিয়াকব, আইহোহান মাহমাসতাল, ক্যাপ্টেন কোকোভিন, রাইনসিন, মেখানিক আরভেস, মিকালইল লোমোনোসোভ, এস কুজনিসোভ, সাইয়ানি সেভারা, এস এমপি নোভোডিভিনেস্ক ও এস এমপি সেভারোডিভিনেস্ক। রাশিয়ার এসব জাহাজে মেশিনারিজ পণ্য আনার কথা ছিল।’
মোংলা বন্দরের ব্যবসায়ী এইচ এম দুলাল বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা রাশিয়ার ৬৯টি জাহাজের তালিকা বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে হাতে পেয়েছি। আগে থেকে অবহিত করার জন্য কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তা না হলে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হতো।’
এর আগে রবিবার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘আমাদের কাছে তাজ্জব লেগেছে যে রাশিয়া জেনেশুনে নিষেধাজ্ঞা আছে—এমন জাহাজের নাম পরিবর্তন করে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের পণ্য পাঠিয়েছে। আমরা এটি আশা করিনি। রাশিয়ার ৬৯টি জাহাজ যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছে। এর বাইরে তাদের কয়েক হাজার জাহাজ আছে। আমরা আশা করি, নিষেধাজ্ঞা নেই—এমন জাহাজে পণ্যগুলো পাঠাবে রাশিয়া।’
বাংলা ট্রিবিউন
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-